একটা সময় ছিলো যখন সাইকেল বলতে স্ট্যান্ড, কেরিয়ার ও বেল সম্বলিত দ্বি-চক্রযান বুঝতাম। কিন্তু ২০১৪ সালে যেদিন “গিয়ার ছাড়া” সাইকেল (পড়ুন সিঙ্গেল গিয়ার সাইকেল, তখন আমার কাছে সাইকেল ছিলো ২ প্রজাতিরঃ গিয়ারওয়ালা ও গিয়ার ছাড়া) বিক্রি করে “গিয়ারওয়ালা” সাইকেল কিনতে গেলাম তখন তো পড়লাম মহা বিপদে! বেল নাই, ক্যারিয়ার নাই, এমনকি সাইকেল এর স্ট্যান্ড নাই! পরে জানতে পারলাম এসব সাইকেল এভাবেই বিক্রি হয়, নো স্ট্যান্ড, নো কেরিয়ার, নো বেল!
আস্তে আস্তে জানতে পারলাম বাইসাইকেল এর সাথে কতো রকমের জিনিস ব্যবহার করতে হয় একটি আরামদায়ক রাইড এর জন্য। এখন আমরা এরকম ১০টি বাইসাইকেল এক্সেসরিজ সম্পর্কে জানবো যা আপনার রাইড এর জন্য অত্যন্ত সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
তার আগে বলে নেয়া দরকার- এই লিস্ট এ হেলমেট এর উল্লেখ নেই। কারন হেলমেট এক্সেসরিজ না, বরং এটা সাইকেলই অংশ, এবং খুবই জরুরী অংশ। হেলমেট ছাড়া সাইকেল চালাবেন না!
১। হেডলাইট ও টেইললাইট
রাতের বেলা সাইক্লিং করার ক্ষেত্রে হেডলাইট ও টেইললাইট এর কোন বিকল্প নেই। যারা শহরে রাইড করেন তারা ভাবতে পারেন শহরে তো যথেষ্ঠ আলো থাকে, হেডলাইট না থাকলেও চলবে। কিন্তু এখানে দেখার বিষয় হলো হেডলাইট নিজে রাস্তা দেখার জন্য যতোটুকু দরকার তারচেয়ে বেশি দরকার এই কারনে যে হেডলাইট থাকলে উল্টোদিক থেকে আসা গাড়ি আপনার উপস্থিতি জানতে পারবে। এই একই কারনে হেডলাইট এর চেয়ে টেইললাইট এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি।
মূল্যঃ হেডলাইট ৩৫০/= থেকে শুরু হয়। উপরের ছবির হেডলাইটটি দোকানভেদে ৩৫০-৪৫০/= বিক্রি হয়। তাছাড়া এরচেয়ে ভালো মানের টি-৬ হেডলাইট ১০০০-১২০০/= টাকায় পাওয়া যায়।
টেইললাইট অনেক ধরনেরই পাওয়া যায়, দাম পড়বে ২৫০-৫০০/= এর মধ্যে। তবে বামের ছবিতে দেখানো ব্লিঙ্কিং লাইট গুলো টেইললাইট হিসেবে ব্যবহার করা যায়, দামেও অনেক সস্তা। এগুলো একেকটি ১০০/= করে পাওয়া যাবে।
২। সাইক্লিং গগলস অথবা সানগ্লাস
রোদেলা দিনে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচানোর জন্য চোখে গ্লাস পড়া প্রয়োজন। তাছাড়া ধুলাবালি ও বাতাসে ভেসে থাকা ছোট ছোট পোকা থেকে বাঁচার জন্যও আমাদের গগলস ব্যবহার করা উচিত।
বাজারে অনেক কমদামী গগলস কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে অনুরোধ থাকবে মোটামোটি ভালো মানের পোলারাইজড গগলস কেনার, তাতে স্পষ্ট দৃষ্টি নিশ্চিত হবে। অপরদিকে বাজে মানের গ্লাস উল্টো চোখের ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিতান্তই যদি গগলস না থাকে তাহলে কমপক্ষে সানগ্লাস পড়ার চেষ্টা করবেন।
মূল্যঃ মোটামুটি ভালো মানের গগলস পাবেন ৪০০-১৫০০/= এর মধ্যে।
৩। রিয়ার ভিউ মিরর
বার বার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের ট্রাফিক দেখতে না চাইলে সাইকেলে রিয়ার ভিউ মিরর লাগিয়ে নেয়া উচিত। বাইসাইকেল এক্সিডেন্ট এর অন্যতম কারন পেছনে ট্রাফিক না দেখে অভারটেকিং অথবা হঠাৎ ডানে চাপানো।
মিরর জোড়ায় কিনতে পাওয়া যায় অথবা একটা করেও লাগিয়ে নেয়া যায়। সাধারণত হ্যান্ডেলবারের ডানদিকে একটা মিরর লাগিয়ে নিলেই যথেষ্ট।
মূল্যঃ প্রতি পিস ১৫০-৫০০/=
৪। ওয়াটার বোতল ক্যারিয়ার
লং রাইডে পানির বিকল্প নেই। শরীর যাতে ডিহাইড্রেটেড না হয় সেজন্য আধা ঘন্টা পরপর স্যালাইন পানি খাওয়া উচিত। এজন্যে সাথে পানি বহন করা প্রয়োজন।
কিছু সাইকেলে ওয়াটার বোতল ক্যারিয়ার সাইকেলের সাথে লাগানো থাকলেও বেশির ভাগ সাইকেলে আলাদা ভাবে কিনে নিতে হয়।
মূল্যঃ বোতল সহ ক্যারিয়ার ১৫০-২০০/= টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
৫। সাইক্লিং ব্যাগ
ফোন, মানিব্যাগ, টুলকিট, সাইক্লিং জার্সি ইত্যাদি বহন করার জন্য অনেক ধরনের ব্যাগ পাওয়া যায়। তবে ছোটখাটো ব্যাগ থেকে পাশের ছবির মতো তিন পার্ট এর ব্যাগ অনেক কাজে দেয়।
মূল্যঃ সাইজভেদে ৩০০-১০০০/=
৬। সিট কাভার
সাধারণত সাইকেলে যেসব সিট থাকে তা অনেক শক্ত হয়, যদিও তা ছোটখাটো রাইডের জন্য উপযোগী কিন্তু লংরাইডের জন্য সিট কাভার ব্যবহার করা উচিত। তাতে ব্যাথা ছাড়া অনেক্ষন টানা সাইকেল চালানো সম্ভব হয়। ভালো সার্ভিসের জন্য জেল প্যাডেড সিট কাভার ব্যবহার করতে পারেন।
মূল্যঃ ৩০০-১০০০/=
৭। টুল কিট
একজন ভালো রাইডার শুধু সাইকেল ভালো মতো চালাতেই জানেনা, সে সাইকেলের ছোটখাটো মেরামতের কাজও জানে। এবং এর জন্য টুলকিট এর প্রয়োজন। তাছাড়া লংরাইডে যেকোন সময় সাইকেলে কোন অসুবিধা দেখা দিলে টুলকিট সাথে থাকলে অনেক সহজেই মেরামত করা যায়।
যেহেতু টুলকিট অনেকদিন ব্যবহার করার জন্যই কিনবেন সেহেতু ভালো মানের টুলকিট কেনা উচিত। সস্তা মানের টুলকিট খুব তাড়াতাড়ি ক্ষয় হয়ে যায় এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
মূল্যঃ ৫০০-১৫০০/=
৮। চেইন ক্লিনিং টুল
সাইকেল শুধু চলালেই হবে না, এর যত্ন নেয়াও দরকার। বিশেষ করে সাইকেলের চেইন, যা নিয়মিত পরিষ্কার করে না রাখলে মরিচা পড়ে যায় এবং সাইকেলের পার্ফরমেন্সে অনেক বাজে প্রভাব ফেলে।
যদিও পুরাতন ব্রাশের সাহায্যেও চেইন পরিষ্কারের কাজ করা সম্ভব, কিন্তু চেইন ক্লিনিং টুল থাকলে কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়।
সাইকেলের চেইন লুবিং সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি দেখতে পারেনঃ বাইসাইকেলের যত্ন
মূল্যঃ ২০০-১২০০/=
৯। স্পিডোমিটার
অত্যাবশ্যক কিছু না, কিন্তু সাইকেলের গতি, টপ স্পিড, ট্রিপ দূরত্ব, মাইলেজ ইত্যাদির হিসাব রাখার জন্য একটা স্পিডোমিটার কিনে নেয়া যেতেই পারে।
তবে শো-অফ কিংবা শখ যা-ই হোক, স্পিডোমিটার কেনার পুর্বে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে তার আগে হেলমেট, হেডলাইট, টেইললাইট, রিয়ার ভিউ মিরর কেনা হয়েছে।
মূল্যঃ ৩৫০-২০০০/=
১০। হ্যান্ড কাভারিং স্লিভস
বাংলাদেশ এর গরম আবহাওয়ায় রাইডের সময় হ্যান্ড স্লিভস পড়া উচিত। তাতে একদিকে যেমন সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে চামরা রক্ষা পাবে একই সাথে কোন হালকা দূর্ঘটনায় পতিত হলে কাটা ছেঁড়া থেকে এটা হাতকে রক্ষা করবে।
(এই পোস্টে উল্লেখকৃত বিভিন্ন প্রোডাক্টের দাম এলাকা ও দোকান ভেদে আলাদা হতে পারে। ছবিতে দেয়া প্রোডাক্টগুলো শুধুমাত্র উদাহরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে, উল্লেখিত দামের সাথে এর সম্পর্ক নেই। এছাড়া কোন প্রোডাক্টের দাম সংশোধন প্রয়োজন মনে করলে কিংবা অন্য কোন সাজেশন থাকলে কমেন্ট এ জানাবেন)
2 Comments
Informativ. Thanks for running such handy site.
ReplyDeleteThank you for the appreciation!
Deleteকমেন্ট বক্সে আপনার মতামত কিংবা প্রশ্ন করুন
(স্পাম কিংবা অশোভন কোন কমেন্ট করা নিষেধ, এবং সাথে সাথে ব্লক করা হবে)