প্রথমেই বলে রাখি, সকালে কী পড়বো কিংবা কোথায় খেতে যাবো এসব ছোটখাটো ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলে তেমন কিছু যায় আসেনা, কিন্তু সাইকেল কেনার সময় ভুল সিদ্ধান্ত অনেক ভোগান্তির কারণ হতে পারে। তাই সাইকেল কেনার আগে অবশ্যই ভালো মতো চিন্তা ভাবনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাইসাইকেল কেনার সময় কিছু ব্যপার অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত, যেমনঃ
বাজেট
প্রথমেই আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে বাইসাইকেলটি কেনার জন্য আপনি ঠিক কতো টাকা খরচ করতে রাজি। সবার সামর্থ্য সমান হয়না, আবার সামর্থ্য থাকার পরেও আপনি হয়তো একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকার বেশি খরচ করতে চাচ্ছেন না। তাই আপনাকে পুরোপুরি ভাবে ঠিক করে নিতে হবে আপনার বাজেট কতো।বাজারে পাঁচ হাজার থেকে লাখ টাকার সাইকেল পাওয়া যায়। তাই ঠিক কোন সাইকেলটি কিনবেন তা আপনার বাজেট নির্ধারণের পর ঠিক করুন।
মনে রাখবেন, দামি কিংবা কমদামি সব সাইকেলই ভালো, যদি সঠিক পরিচর্চা করে ব্যবহার করা হয়। অনেকেই বলবে এই সাইকেল না নিয়ে আরেকটু বাড়িয়ে ওইটা নেন, আবার আপনি যদি ওইটা কিনতে চান তখন অন্যজন বলবে আরেকটু বাড়িয়ে অন্যটা নেন। সুতরাং এসব কথায় মোটেও কান দিবেন না। বাজেট এর মধ্যেই যে সাইকেল পাবেন সেটাই কিনুন। যত্ন করে ব্যবহার করলে সেটাই লাখ টাকার সাইকেলের মতো সার্ভিস দিবে।
বাজেট নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি বিষয়টি মাথায় রাখবেন যে মোটামুটি পনেরশ-দু'হাজার টাকা রাখতে হবে সাইকেলের অন্যান্য এক্সেসরিজ যেমন- হেলমেট, তালা, বেল, সিট কাভার, মাডগার্ড ইত্যাদি কেনার জন্যে।
মনে রাখবেন, দামি কিংবা কমদামি সব সাইকেলই ভালো, যদি সঠিক পরিচর্চা করে ব্যবহার করা হয়। অনেকেই বলবে এই সাইকেল না নিয়ে আরেকটু বাড়িয়ে ওইটা নেন, আবার আপনি যদি ওইটা কিনতে চান তখন অন্যজন বলবে আরেকটু বাড়িয়ে অন্যটা নেন। সুতরাং এসব কথায় মোটেও কান দিবেন না। বাজেট এর মধ্যেই যে সাইকেল পাবেন সেটাই কিনুন। যত্ন করে ব্যবহার করলে সেটাই লাখ টাকার সাইকেলের মতো সার্ভিস দিবে।
বাজেট নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি বিষয়টি মাথায় রাখবেন যে মোটামুটি পনেরশ-দু'হাজার টাকা রাখতে হবে সাইকেলের অন্যান্য এক্সেসরিজ যেমন- হেলমেট, তালা, বেল, সিট কাভার, মাডগার্ড ইত্যাদি কেনার জন্যে।
সব এক্সেসরিজ যে প্রথমেই কিনে নিতে হবে এরকম কোন কথা নেই, তবে হেলমেট অবশ্যই সাইকেল কেনার সাথে সাথে কিনতে হবে!
ব্রান্ড
বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক ভালো ভালো ব্রান্ডের বাইসাইকেল পাওয়া যায়। সাইকেল কেনার সময় সম্ভব হলে ব্রান্ড-এর সাইকেল কেনা উচিৎ। কারণ সাধারণত ব্রান্ডের সাইকেল গুলো সঠিক ফ্রেম জিওমিট্রি মেনে তৈরি করা হয়, যা চালানোর আরাম অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।তবে ব্রান্ড নিয়ে একেবারে মোহাচ্ছন্নও হওয়া যাবে না। বাজেট কম হলে ব্রান্ড এর দিকে নজর না দিয়ে বরং নিজের পছন্দ মতো এবং স্পেসিফিকেশন দেখে সাইকেল কেনা উচিত। মনে রাখবেন, আপনি প্রোডাক্ট কিনছেন, ব্রান্ড না।
এমন হতে দেখেছি যে, দেশের সেরা ব্রান্ড এর দামি সাইকেল কিনে কয়েকদিন পরেই সাইকেলের অবস্থা নাজুক করে ফেলসে যত্নের অভাবে, আবার এমনও দেখেছি যে অপরিচিত ব্রান্ডের একদম কমদামি সাইকেল ৫ বছর ব্যবহার করার পরেও দিব্যি চালিয়ে বেড়াচ্ছে এখনো।
বাংলাদেশে পাওয়া যায় এরকম উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ব্রান্ড হলো- কোর, ভেলোস, গোস্ট, জায়ান্ট, হিরো সাইকেল, মাস্টাং, বিয়াঙ্কি, নেক্রো, ফিনিক্স, সারাসেন, রিলিগ, ট্রেক ইত্যাদি।
ঠিক কোন ধরনের সাইকেল কিনতে চান
ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে সাইকেল অনেক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন শহরের মসৃণ রাস্তার জন্য রোড বাইক বেশি উপযোগী, অন্যদিকে মাটির রাস্তা কিংবা অতিরিক্ত ভাঙ্গা রাস্তায় মাউন্টেন বাইক উপযোগী। আবার কিছু হাইব্রিড বাইক পাওয়া যা মাউন্টেন বাইক ও রোড বাইক দু’টোর সংমিশ্রনে তৈরী। এগুলোর চাকা চিকন হোয়ার কারণে মসৃণ রাস্তায় আরামে চালানো যায়, আবার সাসপেনশন থাকায় হালকা ভাঙ্গা রাস্তায়ও চালানো যায়।তাছাড়া ফ্যাটবাইক (বালু কিংবা কাদার মধ্যে চালানোর উপযোগী), কমিউটার (শহরের ভেতরে ছোটখাটো দূরত্বে যাতায়াতের জন্য উপযোগী) ইত্যাদি রকমের বাইসাইকেল পাওয়া যায়। আপনি কেমন রাস্তায় নিয়মিত চালাবেন সেই ধরনের রাস্তার উপযোগী বাইক কিনুন। তবে বর্তমানে মাউন্টেন বাইক এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এর প্রধান কারণ হলো- ১। মাউন্টেন বাইক শহুরে কিংবা মাটির রাস্তায় আরামসে চালানো যায়, ২। দেশে এখন সুলভ মুল্যে অনেক ভালো মানের মাউন্টেন বাইক পাওয়া যায়।
ফ্রেমের ম্যাটারিয়াল
বাইসাইকেল এর ফ্রেম অনেক ধরনের ম্যাটারিয়াল দিয়ে তৈরী করা হয়। যেমনঃ
- আয়রন ফ্রেম - লোহার তৈরী এসব ফ্রেমের অনেক ওজন হয়। তাছাড়া সাইকেল চালাতেও অনেক বেগ পেতে হয়। যে কোন অবস্থাতেই এসব ফ্রেমের সাইকেল এড়িয়ে চলা উচিৎ।
- এলয় ফ্রেম - এলুমিনিয়াম এলয় দিয়ে তৈরী করা হয় বলে অনেক হালকা হয় ওজনে। সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায় বলে বেশিরভাগ সাইকেলে এলয় ফ্রেম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- টাইটেনিয়াম ফ্রেম - খুব কম সাইকেলেই টাইটেনিয়াম ফ্রেম ব্যবহার করা হয়। টাইটেনিয়াম অনেক দামি ম্যাটারিয়াল হওয়ার কারণে এই ফ্রেম কিনতে অনেক পয়সা গুনতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশে টাইটেনিয়াম ফ্রেম প্রায় পাওয়া যায়না বললেই চলে।
- কার্বন ফাইবার ফ্রেম - এই ফ্রেম অনেক টেকসই হয় এবং ওজনে একদম হালকা হয়। কিন্তু একই সাথে এটা অনেক দামি ফ্রেম। তাই কেউ কম পয়সায় কার্বন ফাইবার ফ্রেমের সাইকেল বিক্রি করবে বললে ফাঁদে পা দিবেন না।
ওজন, দাম ও সহজলভ্যতা - সব কিছু বিবেচনা করে দেখা যায় এলয় ফ্রেমের সাইকেল সব থেকে সুবিধাজনক। তবে আপনার বাজেট অনেক বেশি (লাখের মতো) হলে কার্বন ফাইবারের ফ্রেমের সাইকেল কিনতে পারেন।
সাইকেলের ফ্রেম সাইজ
সাইকেল কেনার ক্ষেত্রে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা বেশিরভাগ মানুষ এড়িয়ে যায় এবং ভুল ফ্রেম সাইজের সাইকেল কেনার জন্য পরবর্তীতে রাইডের পর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা হয়। তারপর অনেকে না বুঝে সাইকেল চালানোই ছেড়ে দেয়।ফ্রেম সাইজ রাইডারের উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। রাইডার লম্বা হলে বড় সাইজের ফ্রেম আরামদায়ক, অপরদিকে রাইডার খাটো হলে তাঁর জন্য ছোট ফ্রেমের সাইকেল কেনা উচিত।
আসুন দেখে নেই রাইডারের উচ্চতার সাথে সাইকেলের ফ্রেম সাইজের সম্পর্ক-
- উচ্চতা ৫’০”-৫’৩” বা ১৫২-১৬০ সে.মি. হলে মাউন্টেন বাইক ১৩”-১৪”, রোড বাইক ৪৯-৫০ সে.মি.
- উচ্চতা ৫’৩”-৫’৬” ১৬০-১৬৮ সে.মি. হলে মাউন্টেন বাইক ১৫”-১৬”, রোড বাইক ৫১-৫৩ সে.মি.
- উচ্চতা ৫’৬”-৫’৯” ১৬৮-১৭৫ সে.মি. হলে মাউন্টেন বাইক ১৭”-১৮”, রোড বাইক ৫৪-৫৫ সে.মি.
- উচ্চতা ৫’৯”-৬’০” ১৭৫-১৮৩ সে.মি. হলে মাউন্টেন বাইক ১৯”-২০”, রোড বাইক ৫৬-৫৮ সে.মি.
- উচ্চতা ৬’০”-৬’৩” ১৮৩-১৯১ সে.মি. হলে মাউন্টেন বাইক ২১”-২২”, রোড বাইক ৫৮-৬০ সে.মি.
- উচ্চতা ৬’৩”-৬’৬” ১৯১-১৯৮ সে.মি. হলে মাউন্টেন বাইক ২৩”-২৪”, রোড বাইক ৬১-৬৩ সে.মি.
অন্যান্য যেসব স্পেসিফিকেশন দেখবেন
পছন্দের সাইকেল শুধু দেখতে সুন্দর হলেই হবেনা, তার পার্টসও ভালো কোয়ালিটি এর হতে হবে। আসুন দেখে নেই কোন কোন পার্টস এর দিকে সাধারণত নজর দিবেন-
- সাস্পেনশন - মাউন্টেন বাইক কিংবা হাইব্রিড বাইক এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ সাস্পেনশন। এটির হিসাব মি.মিটারে করা হয়ে থাকে। এটি যতো বেশি হবে সাস্পেনশন ততো বেশি শক গ্রহণ করতে পারবে।
- চাকা - দেখে নিবেন চাকা কতো সাইজের এবং কোন কোম্পানির।
- টায়ার - অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো কোম্পানির টায়ার হলে অনেকদিন সার্ভিস দিবে। অন্যথায় খুব তাড়াতাড়ি ক্ষয় হয়ে যাবে।
- ফ্রন্ট ও রিয়ার ডেরা - গিয়ার সাইকেলের যে অংশ একদম চাকার সাথে থাকে এবং গিয়ার পরিবর্তনে সাহায্য করে তাকে ডেরা বলা হয়। মাল্টি গিয়ার সাইকেল কিনতে গেলে এটির দিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে।
- গিয়ার শিফটার - হ্যান্ডেল বারের যে অংশ দিয়ে গিয়ার পরিবর্তন করতে হয় সেটাই গিয়ার শিফটার। কিছু কিছু সাইকেলে হাত দিয়ে মুড়িয়ে গিয়ার পরিবর্তন করতে হয় এরকম শিফটার দেয়া থাকে। এসব শিফটার পরিহার করা উচিৎ।
- ব্রেক সেট - ভালো কোয়ালিটির ব্রেক সেট থাকলে যে আরাম পাবেন সাইকেল চালিয়ে সেটা নিজে না চালালে বুঝতে পারবেন না। তাই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে ব্রেক সেট ভালো কোয়ালিটির হয়। অনেক ধরণের ব্রেক সেট থাকে সাইকেলে, যেমন- ভি-ব্রেক, ডিস্ক ব্রেক, হাইড্রোলিক ব্রেক ইত্যাদি।
হাইড্রোলিক ব্রেক সবথেকে কার্যকর কিন্তু ব্যয়বহুল। তবে অনেক ভালো কোয়ালিটির ডিস্ক ব্রেক আছে যা হাইড্রোলিকের মতো কাজ না দিলেও যথেষ্ট ভালো ব্রেকিং ক্ষমতাসম্পন্ন হয়।
ব্যাস হয়ে গেলো আপনার পছন্দ মতো পারফেক্ট বাইসাইকেল নির্বাচন! এখন সাইকেল কেনার জন্য আপনার নিকটস্থ সাইকেলের দোকানে স্বশরীরে যান; পরিচিত সাইকেলের দোকান থাকলে ছাড়ও পেয়ে যাবেন হয়তো।
তাছাড়া বাইকশপ গুলো প্রায়ই নানা উৎসবে ছাড় দিয়ে থাকে। পরিচিত দোকান না থাকলেও ফেসবুকে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সাইক্লিং গ্রুপে খোঁজ নিলেই আপনার এলাকার বিশ্বস্ত বাইসাইকেল শপ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
দোকান থেকে সাইকেল কেনার পর অবশ্যই মনে করে সেল রিসিট আনবেন। সেল রিসিটে সাইকেল এর ফ্রেম নাম্বার লিখে দেয়া হয়। সাইকেল হারিয়ে গেলে কিংবা বিক্রি করতে গেলে এটা আপনার দরকার পরবে।
সাইকেল কিনেই আপনার কাজ শেষ নয়। এর সঠিক যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। তা না হলে খুব তাড়াতাড়িই সাইকেলের পার্ফরমেন্স খারাপ হয়ে যাবে, সেটা যতো ভালো সাইকেলই হোক না কেন।
সাইকেলের যত্ন নিন, হেলমেট ব্যবহার করুন, সতর্কতার সাথে সাইকেল চালান, সুস্থ থাকুন।
সাইকেলের যত্ন নিন, হেলমেট ব্যবহার করুন, সতর্কতার সাথে সাইকেল চালান, সুস্থ থাকুন।
4 Comments
Excellent 👍
ReplyDeleteThank you!
DeleteThank you so much, vai💚
ReplyDeleteWe are happy as long as our post help our fellow cyclist brothers. You're welcome btw.
Deleteকমেন্ট বক্সে আপনার মতামত কিংবা প্রশ্ন করুন
(স্পাম কিংবা অশোভন কোন কমেন্ট করা নিষেধ, এবং সাথে সাথে ব্লক করা হবে)