অনেকেই এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন না এবং ভাবেন- "লাইট না থাকলে কি হলো আমার তো সমস্যা হয় না!" কিন্তু এ ধরনের চিন্তা ভাবনা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই অন্ধকারে বাইসাইকেল চালানোর সময় লাইট ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরতেই এই পোষ্ট।
হেডলাইট এর গুরুত্ব
রাতের বেলা সাইক্লিং করতে হেডলাইটের কোন বিকল্প নেই। যদিও ব্লিঙ্কিং লাইট ব্যবহার করে কিছুটা কাজ সাড়া যায়, কিন্তু হেডলাইট এর কাজ অন্য কোন লাইট দিয়ে পুরোপুরিভাবে চালানো সম্ভব না। কেন এটি এতো প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজ? আসুন জেনে নেই-
অন্ধকারে রাস্তা দেখতে
স্বাভাবিক ভাবেই, হেডলাইটের প্রধান কাজই হলো অন্ধকারে রাস্তা ঠিক মতো দেখানো। বিশেষ করে গ্রামের রাস্তায় কিংবা হাইওয়ে-তে ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা, গর্ত, রাস্তার টিউমার (ফুলে থাকা অংশ) এড়াতে ভালো মানের হেডোলাইটের বিকল্প নেই।
অপরিচিত রাস্তায় হাই স্পিডে চালানো অবস্থায় হঠাৎ এরকম কোন গর্তের মধ্যে চাকা পড়লে দূর্ঘটনার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। তাছাড়া রাস্তা ঠিক মতো দেখা না গেলে অনেক সময় আঁকাবাঁকা রাস্তায় পথ হারিয়ে খাঁদে পড়ে যাওয়া টা অস্বাভাবিক কিছু না।
তাই এরকম অনাখাঙ্কিত দূর্ঘটনা এড়াতে ভালো মানের হেডলাইট অবশ্যই কিনে নিবেন, বিশেষ করে আপনি যদি নিয়মিত রাতে রাইড দেন।
অন্যান্য যানবাহনের কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে
অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটি জানিনা বা খেয়াল করি না। হেডলাইট আপনাকে যতোটুকু রাস্তা দেখাবে, ততোটুকুই সাহায্য করবে আপনার সাইকেলকে অন্যান্য যানবাহন চালকের কাছে ফুটিয়ে তুলতে।
কেন এই জিনিসটা গুরুত্বপূর্ন?
বিপরীত থেকে আসা একটা বাস, কিংবা ট্রাক যদি আপনাকে দেখতে পায় আগে থেকেই, তাহলে সময় নিয়ে আপনাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারবে। অপরদিকে হেডলাইট না থাকার কারণে চালক হয়তো আপনাকে অনেক পরে খেয়াল করতে পারে, যখন আর আপনাকে যথেষ্ট জায়গা দেয়ার সময় থাকবে না। তাই আপনি দূর্ঘটনার কবলে পড়তে পারেন। মনে রাখবেন, কোন চালকই ইচ্ছা করে অন্যকে চাপা দিতে চায়না।
শহরেও কি তাহলে নিজেকে ফুটিয়ে তুলার জন্য হেডলাইট ব্যবহার করতে হবে?
উত্তর হচ্ছে- হ্যাঁ।
যদিও শহুরে রাস্তায় নিয়ন আলোর অভাব নেই, কিন্তু এর পরেও একজন চালক আপনাকে না-ও দেখতে পারে। বিশেষ করে অন্যান্য গাড়ির ভিড়ে আপনার ছোট্ট বাইসাইকেল আলাদাভাবে খেয়াল না করলে চালককে খুব একটা দোষ দিতে পারবেন না। তাই শহরের মধ্যে বাইসাইকেল চালানোর সময়ও হেডলাইট ব্যবহার করুন।
বাজারে অনেক ধরনের হেডলাইট কিনতে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হেডলাইট হচ্ছে CELOCO বাইসাইকেল হেডলাইট। তাছাড়া T-6 হেডলাইটও অনেক জনপ্রিয়।
আপনি যদি হেডলাইট ব্যবহার করতে একান্ত অপারগ হোন, তাহলে কমপক্ষে একটি ব্লিঙ্কিং লাইট হ্যান্ডেলবারে লাগিয়ে ব্যবহার করুন, অন্ত্যত অন্যান্য চালক আপনাকে আগে থেকে খেয়াল করতে পারবেন।
টেইললাইটের গুরুত্ব
হেডলাইটের পাশাপাশি সাইকেলের পেছনে একটা টেইললাইট ব্যবহার করা সমান, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-
পেছনের গাড়ির কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে
টেইললাইটের প্রধান এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অন্ধকারে আপনার উপস্থিতি পেছনের যানবাহনের চালকের কাছে জানান দেয়া।
হেডলাইটের মতো এখানেও ঠিক একই কথা, কোন ধরনের লাইট না থাকলে অন্ধকারে যে কোন যানবাহন আপনাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিতে পারে। এরকম ধাক্কার কারণে প্রতি বছর অনেক সাইক্লিস্ট মারা যান। তাই এরকম দূর্ঘটনা যাতে না হয় এর জন্যে টেইললাইট ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
পেছনে টেইললাইট এর বদলে ব্লিঙ্কিং লাইট ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অবশ্যই যেন সেটা লাল রঙয়ের হয়।
ব্লিঙ্কিং লাইট, সামনে এবং পেছনে ব্যবহার করা যায় |
কোনটি বেশি জরুরী? হেডলাইট নাকি টেইললাইট?
এই প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাবে দেয়া সম্ভব না। বিভিন্ন অবস্থা অনুযায়ী কোন কোন ক্ষেত্রে হেডলাইট বেশি জরুরী, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে টেইললাইট।
শহুরে রাস্তায় স্ট্রিট লাইট থাকার কারণে রাস্তা সাধারণত আলোকিত থাকে। তাই আপনার দেখার জন্য হেডলাইট ততোটা প্রয়োজন হয়না। তাছাড়া শহুরে রাস্তা আলাদা আলাদা লেন থাকার কারণে উল্টো দিকে গাড়িও আসে না (বাঙ্গালী বলে কথা, উল্টো দিকে হঠাৎ গাড়ি চলে আসতে পারে)। তাই এই অবস্থায় টেইল লাইট-ই বেশি দরকারী, যাতে অন্যন্য গাড়ি আপনাকে দূর থেকে দেখতে পারে।
অপরদিকে গ্রাম এলাকায় রাস্তা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। তাই এসব স্থানে হেডলাইট ব্যবহার অত্যাবশ্যক। যেহেতু গাড়িঘোড়া কম থাকে এবং পেছন থেকে হঠাৎ কোন গাড়ি ধাক্কা দেয়ার সম্ভাবনাও কম (যদি কোন গাড়ি পেছন থেকে আসেও, আপনি নিজেই শব্দ শুনতে পাবেন), তাই এইসব ক্ষেত্রে টেইললাইটের চেয়ে হেডলাইট-ই বেশি জরুরী।
এছাড়া অন্যান্য যা কিছু ব্যবহার করতে পারেন নিজেকে ফুটিয়ে তোলার জন্য
এতোক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে, লাইট ব্যবহার করে নিজে রাস্তা দেখা থেকে অন্যরা যাতে আপনাকে দেখতে পারে এটা বেশি গুরুত্বপূর্ন। তাই হেডলাইট এবং টেইললাইট ব্যবহার করার সাথে সাথে আরো কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে নিজেকে অন্ধকারে দৃষ্টিগোচর করতে পারবেন-
- রিফ্লেক্টর: সাইকেলের সামনে এবং পেছনে লাইটের পাশাপাশি রিফ্লেক্টর ব্যবহার করতে পারেন। তবে রিফ্লেক্টরকে কখনোই লাইটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করবেন না। কারণ রিফ্লেক্টর শুধুমাত্র আলো পড়লেই জ্বল জ্বল করে। যে কারনে এটি সব সময় সহজে চোখে পড়ে না।
- হ্যালমেটে লাইট ব্যবহার: অনেক সময় হ্যালমেটের পেছনে রিফ্লেক্টর বা লাইট লাগানো থাকে। এরকম কিছু না থাকলেও কাস্টম ভাবে লাগিয়ে নেয়া যায়। তাতে এটি এক্সট্রা একটা সেফটি হেসেবে কাজ করে।
- প্যাডেলের রিফ্লেক্টর: প্রায় সব বাইকের প্যাডেলেই রিফ্লেক্টর লাগানো থাকে। পেছনের লাইট রিফ্লেক্ট করার জন্য এটি অনেক কার্যকরি একটা ব্যবস্থা।
- লাইট রিফ্লেক্টিং সাইক্লিং জামা ব্যবহার: হাইওয়েতে সাইক্লিং করার সময় এই ধরনের জামা পড়া খুবই জরুরী। তাতে অনেক দূর থেকেই অন্যান্য চালকেরা আপনাকে দেখতে পারবে। তাছাড়া এটি আপনার পুরো শরীর জুড়ে থাকার কারণে অন্যরা আপনাকে খেয়াল করতে বাধ্য!
শেষ কথা
রাতের বেলা বাইসাইকেল চালানোর সময় নানা ধরনের এক্সিডেন্ট এড়াতে হেডলাইট ও টেইললাইট দু'টোই ব্যবহার সমান গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, লাইট ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি অন্যকে যতটুকু দেখছেন এর চাইতে অন্যরা আপনাকে দেখছে কি না সেটা নিশ্চিত করাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।
বাইসাইকেল এর সেফটির এবং চালানোর আরামের জন্য আরো অনেক এক্সেসরিজ ব্যবহার করতে হয়। প্রয়োজনে সেসব এক্সেসরিজ কিনে নেন।
আমাদের এই পোষ্টটি ভালো লাগলে কিংবা আপনার কাছে উপকারী মনে হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
হ্যাপী সাইক্লিং
0 Comments
কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত কিংবা প্রশ্ন করুন
(স্পাম কিংবা অশোভন কোন কমেন্ট করা নিষেধ, এবং সাথে সাথে ব্লক করা হবে)