সাইকেলে চড়ে বিশ্বভ্রমণ

সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণ

নাম আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল। খুব ছোটবেলা থেকেই স্বভাব ছিল বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া। সত্যিই একদিন বের হয়ে গেলেন ঘর ছেড়ে। সময়টা তখন ১৯৯৭ সাল। ১০ মাসে ১৯টা দেশ ভ্রমণ করেছিলেন সাইকেলে চড়ে। পকেটে তখন ছিল মাত্র ৯০০ ডলার। মজার বিষয়, যখন ফিরে আসেন তখন পকেটে ১১০০ ডলার। তিনি বিশ্বাস করেন ভ্রমণ করতে আসলে পয়সা লাগে না মন লাগে...

ভ্রমণপিয়াসী বা বাংলায় আরও ভালো শব্দ পরিব্রাজক। এই সময়ের এক আধুনিক পরিব্রাজক উজ্জ্বল। তার মুখে চেনা-অচেনা সব শহরের গল্পগুলোই অসাধারণ। ছোটবেলা থেকেই পড়ার নেশা তৈরি হয়েছিল। প্রচুর বই পড়ে ফেলেছিলেন তিনি প্রাইমারি স্কুলে থাকতেই। আর এই দিক থেকে ভ্রমণ বিষয়ক বইগুলোই তাকে টানত ভিশন। আর তাই বড়বেলায় ঘোরাঘুরির অভিজ্ঞতাটা বড় হবে এটাই স্বাভাবিক। শিকড়টা বাংলাদেশেই। বিশ্বের নানা প্রান্তে যখনই ছুটে যান সঙ্গে নেন লাল-সবুজের পতাকা। আর সেইসঙ্গে ভ্রমণপ্রিয় মানুষ হিসেবে পৃথিবীর নানা প্রান্তে এঁকেছেন নিজের পদচিহ্ন।

সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণ


একেক দেশের মানুষের জীবন, সংস্কৃতি আর ইতিহাস একেক রকম। সেই বৈচিত্র্য থেকে একজন মানুষ যে জ্ঞান আর আনন্দ পেতে পারে সেটি অন্য কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ৫৭টি দেশের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ানো উজ্জ্বল এসেছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনে। জানিয়েছেন তার ঘুরে বেড়ানোর গল্প।

পুরো নাম আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল। ভ্রমণই তার পেশা এবং নেশা। খুব ছোটবেলা থেকেই স্বভাব ছিল বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া। এই স্বভাবটাই কাজে লেগে গেছে তার জীবনের চলার পথেও। তাই কৈশর পেরোনো টগবগে তরুণ বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েছিলেন ১৯৯৭ সালেই। সাইকেলে করে বিশ্বের ১৯ টা দেশ ভ্রমণ করেন টানা ৯ মাসে। সঙ্গে নিয়েছিলেন মাত্র অল্প কিছু ডলার। সে সময় আলোড়ন তুলেছিলেন গোটা বিশ্বে।


ভ্রমণে রামনাথ বিশ্বাস হয়তো একটা প্রভাব বিস্তার করেছিল আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বলের ওপর। রামনাথ বিশ্বাস ছিলেন বিখ্যাত ট্র্যাভেলার। আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, রামনাথ বিশ্বাসকে নিয়ে দুটো টিশার্ট করিয়েছিলাম। তিনি নিজের ভাষায় ৩০টা বই লিখেছেন শুধু মাত্র ট্র্যাভেলের ওপর। নিজের ভাষায় এর আগে ভ্রমণ বিষয়ে এত বই আর কেউ লিখেননি। উনার বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করাও হয়েছিল। আমেরিকায় কালোদের ওপর অত্যাচার নিয়ে বই লেখার পর তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। তাকে জেলও খাটতে হয় দুটো দেশে।

ইয়ং টুরিস্ট ক্লাব অব বাংলাদেশ নামে আমাদের একটা ক্লাব ছিল। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েচিল ক্লাবটি। আমি সেখানে মেম্বার হই ৮৯ সালে ভ্রমণ শুরু করি আরও দুই বছর পরে। এই ক্লাবের মেম্বাররা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এসে সেই অভিজ্ঞতা বলতেন।

সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণ

তাদের মুখে আকর্ষণীয় সব জায়গার বর্ণনা শুনে শুনে ঘুরার নেশাটা পেয়ে বসে আমাকে। সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে পড়েছিলাম ছোট বয়সেই। ঘুরার নেশাটা তো খুব চেপে বসল। কিন্তু তখন তো স্টুডেন্ট ছিলাম টাকা ছিল না। আবার আব্বাকে প্রেশার দিতে পারি না। তাই কীভাবে কম খরচে ভ্রমণে বের হওয়া যায় তাই ভাবছিলাম। দেখলাম সাইক্লিং ভ্রমণের জন্য বেস্ট। বিশ্বের অনেকে সাইক্লিং করে ভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন। সাইকেলে ভ্রমণ করতে পকেটে টাকা লাগে না খুব বেশি।

আমি যখন ১৯৯৭ সালে বিশ্বভ্রমণে বেড় হই তখন আমি ১০ মাসে ১৯টা দেশ ভ্রমণ করেছিলাম সাইকেলে চড়ে। আমার পকেটে তখন ছিল মাত্র ৯০০ ডলার। আর আমি যখন ফেরত আসি তখন আমার পকেটে ১১০০ ডলার। আমি দশ মাসে মাত্র তিন দিন হোটেলে ছিলাম। দুটা দেশে মসজিদে রাত কাটিয়েছি, টেলিফোন বুথে রাত কাটিয়েছি।



আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের মানুষ ঘরকোনা এটা একদমই সত্যি নয়। সারা বিশ্বে বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বলেই ভ্রমণে অর্থনৈতিক, মানবিক, মোরাল অনেক সাপোর্ট পাওয়া যায় বলে মনে করেন তিনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোরাল সাপোর্টটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মোরাল সাপোর্ট ভ্রমণপিয়াসীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তুলে।

আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, মানসিকভাবে যদি আপনি শক্তিশালী না হন তবে এগোতে পারবেন না। ভ্রমণে আপনাকে সবার আগে মানসিকভাবে ফিট হতে হবে। আর বেশি প্রয়োজন ভ্রমণে যাওয়ার আগে ভ্রমণ বিষয়ক বই পড়া। নিজের ভিতর কনফিডেন্স তৈরি করতে হবে। আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল ভ্রমণে বিভিন্ন দেশের মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখার বোঝার চেষ্টা করেছেন। তিনি মনে করেন যে কোনো জায়গায় শুধু গেলেই হবে না। কোনো জায়গা সম্পর্কে ধারণা নিতে হলে সেখানকার মানুষের সঙ্গে বেশকিছুদিন কাটাতে হবে। আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল মানুষকে বোঝার চেষ্টা করেন। নানান জায়গার নানা রকমের মানুষের জীবন তাকে টানে।

আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, মানুষের সান্নিধ্য বা ভালোবাসা পেতে হলে সবার আগে বুঝতে হবে আপনি নিজে মানুষটা কেমন। বাংলাদেশিরা অনেক বেশি ভ্রমণপিয়াসু। পৃথিবীতে বাংলা ভাষায় ভ্রমণ বিষয়ক যত ম্যাগাজিন রয়েছে বিশ্বের আর কোথাও ভ্রমণ বিষয়ে নিজস্ব ভাষায় এত ম্যাগাজিন নেই। আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল সব শেষে বলেন, আমাদের প্রোফেটের একটা কথা আছে যেখানে তিনি বলছেন তুমি আমাকে বল না তুমি কতটা শিক্ষিত। তুমি আমাকে বল তুমি কতটা ভ্রমণ করেছ।

(লিখাটি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে সংগৃহীত)

Post a Comment

0 Comments