ফ্রেম সাইজের বেসিক
ফ্রেম সাইজ মাপার আগে জানতে হবে একটি সাইকেলের ফ্রেম সাইজ বলতে আসলে কি বুঝি। সাইকেলের ফ্রেম সাইজ নির্ভর করে অনেক গুলো বিষয়ের ওপর, যেমন- টপ টিউব (Top Tube) এর দৈর্ঘ্য, সিট টিউব (Seat Tube) এর দৈর্ঘ্য, হেড টিউব (Head Tube) এর দৈর্ঘ্য, স্ট্যাক এন্ড রিচ (Stack & Reach) ইত্যাদির ওপর। তাই সরাসরি যে কোন একটি দৈর্ঘ্য দিয়ে ফ্রেম সাইজ হিসেব করাটা মানানসই নয়।
জেনে রাখা ভালো, মাউন্টেন বাইকের ফ্রেম সাইজ সাধারণত ইঞ্চিতে হিসাব করা হয়ে থাকে, এবং রোড বাইকের ফ্রেম সাইজ সে.মি.-এ হিসাব করা হয়। এর কোন নির্দিষ্ট কারণ নেই, বরং এটি একটি অলিখিত নিয়ম এর মতোই হয়ে গেছে।
সিট টিউব দৈর্ঘ্য
সাইকেলের সিট যেই খাঁড়া টিউবের মধ্যে লাগানো থাকে সেটা কে বলে সিট টিউব। এই সিট টিউবের দৈর্ঘ্যকেই সাধারণত "ফ্রেম সাইজ" বলা হয়ে থাকে।
সিট টিউব এর দৈর্ঘ্য দু'টি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে হিসাব করা যায়।
- C-C সিট টিউব দৈর্ঘ্য- হিসাব করার জন্য বটম ব্র্যাকেটের মধ্যবিন্দু (সাইকেলের প্যাডেল যেই বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরে) সেখান থেকে টপ টিউব যেখানে হেড টিউবের সাথে মিলেছে তার মধ্যবিন্দু পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হিসেব করতে হবে। C-C বলতে Centre-Centre বুঝানো হয়েছে।
- C-T সিট টিউব দৈর্ঘ্য- হিসাব করার জন্য বটম ব্র্যাকেটের মধ্যবিন্দু থেকে টপ টিউব এর সর্বোচ্চ বিন্দু পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হিসেব করতে হবে। C-T বলতে Centre-Top বুঝানো হয়েছে।
কোম্পানিভেদে সিট টিউবের দৈর্ঘ্য ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে হিসেব করা হয়ে থাকে। তাই এক কোম্পানির ২২" সাইজের সাইকেল অন্য কোম্পানির সেম সাইজের সাইকেলের ফ্রেম এর সাইজ প্রকৃতপক্ষে এক নাও হতে পারে।
রাইডারের হাইটের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্রেম সাইজের সাইকেল বিভিন্ন রাইডারের জন্য উপযোগী। তাই রাইডারের হাইট জেনে ফ্রেম সাইজ নির্বাচন করতে হয়, এবং এর জন্য সহায়ক একটি লিস্ট এই পোষ্টের নিচে দেয়া আছে।
ইনসিম হাইট দিয়ে ফ্রেম সাইজ বের করা
সঠিক সাইজের সাইকেল বুঝার জন্য রাইডারের হাইটের পাশাপাশি ইনসিম হাইট হিসাব করাও জরুরী।
দু'পায়ের মাঝখানে ৬-৮ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে আপনি সোজা হয়ে দাঁড়ালে মাটি থেকে আপনার দু'পায়ের জয়েন্ট (ঊরুসন্ধি) পর্যন্ত যে উচ্চতা তাকে বলা হয় ইনসিম হাইট।
যদিও ছবিতে খালি পায়ে হিসেব করা হচ্ছে, কিন্তু আপনি এই হিসেব করার সময় অবশ্যই জুতো পড়ে হিসেব করবেন, কারণ সাইকেল আপনি জুতো পড়েই চালাবেন। এখন রোড বাইকের জন্য এই উচ্চতাকে ০.৬৬ দিয়ে গুণ করুন, এবং মাউন্টেন বাইকের জন্য এই উচ্চতাকে ০.৫৮ দিয়ে গুণ করুন। গুণের পর যেই উত্তর পাবেন এটাই আপনার জন্য মানানসই ফ্রেম সাইজ।
আরো সুবিধার জন্য একটা পদ্ধতিতে ফ্রেম নির্বাচন করা যায়, সেটা হলো- সাইকেলের ফ্রেম সাইজ এমনভাবে নির্বাচন করুন যেন সাইকেলটি আপনি দু'পায়ের মাঝে রেখে মাটিতে পা রেখে (জুতো পড়ে) দাঁড়ালে সাইকেলের টপ টিউব থেকে আপনার ঊরুসন্ধি মোটামোটি ২ ইঞ্চি উপরে থাকে।
স্বাভাবিকভাবেই, লম্বা রাইডারের জন্য বড় সাইজের ফ্রেম নির্বাচন করতে হবে, এবং খাটো রাইডারের জন্য ছোট সাইজের ফ্রেম নির্বাচন করতে হবে। ঠিক কতো হাইটের জন্য কোন সাইজের ফ্রেম পারফেক্ট তা নিচের লিস্ট এর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে-
উচ্চতার বিপরীতে মাউন্টেন বাইকের ফ্রেম সাইজ
- উচ্চতা ৪’১১”-৫’৩” বা ইনসিম হাইট ২৭" হলে ফ্রেম সাইজ ১৩”-১৪”
- উচ্চতা ৫’২”-৫’৭” বা ইনসিম হাইট ২৭"-২৯" হলে ফ্রেম সাইজ ১৫”-১৬”
- উচ্চতা ৫’৬”-৫’১১” বা ইনসিম হাইট ২৯"-৩১" হলে ফ্রেম সাইজ ১৭”-১৮”
- উচ্চতা ৫’১০”-৬’২” বা ইনসিম হাইট ৩১"-৩৩" হলে ফ্রেম সাইজ ১৯”-২০”
- উচ্চতা ৬’১”-৬’৪” বা ইনসিম হাইট ৩৩"-৩৫" হলে ফ্রেম সাইজ ২১”-২২”
- উচ্চতা ৬’৩”+ বা ইনসিম হাইট ৩৫"+ হলে ফ্রেম সাইজ ২৩”-২৪”
উচ্চতার বিপরীতে রোড বাইকের ফ্রেম সাইজ
- উচ্চতা ৪’৮”-৪’১১” বা ইনসিম হাইট <২৭" হলে ফ্রেম সাইজ ৪৫-৪৭ সে.মি.
- উচ্চতা ৪’১১”-৫’৩” বা ইনসিম হাইট ২৭"-২৮" হলে ফ্রেম সাইজ ৪৮-৫০ সে.মি.
- উচ্চতা ৫’৩”-৫’৭” বা ইনসিম হাইট ২৮"-৩০" হলে ফ্রেম সাইজ ৫১-৫৩ সে.মি.
- উচ্চতা ৫’৭”-৫’১১” বা ইনসিম হাইট ৩০"-৩২" হলে ফ্রেম সাইজ ৫৪-৫৬ সে.মি.
- উচ্চতা ৫’১১”-৬’৩” বা ইনসিম হাইট ৩২"-৩৩" হলে ফ্রেম সাইজ ৫৭-৫৯ সে.মি.
- উচ্চতা ৬’৩”-৬’৬” বা ইনসিম হাইট ৩৩"+ হলে ফ্রেম সাইজ ৬০-৬২ সে.মি.
উপরে উল্লেখিত সাইজ চার্ট শুধুমাত্র একটি সহায়িকা, এটা মেনেই কিনতে হবে এমন কোন কথা নেই। একজন রাইডার তার সুবিধা অনুযায়ী এই চার্টের বাইরে গিয়েও নিজের সুবিধামতো সাইজের সাইকেল কিনতে পারেন।
এছাড়াও ফ্রেম সাইজ হিসেব করার জন্য আমাদের ফ্রেম সাইজ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ফ্রেম সাইজ হিসেব করে নিতে পারেন!
সিট টিউবের দৈর্ঘ্য ছাড়াও আরো কিছু পরিমাপ আছে যার ওপর নির্ভর করে সাইকেলের ফ্রেম এর ধরন নির্ধারণ করা হয়। তাই রাইডারের চালানোর স্টাইল মাথায় রেখে ওই স্টাইলের সাথে মানানসই ফ্রেম কিনতে হবে। এবং এর জন্য অন্যান্য কিছু হিসেব জানতে হবে আমাদের। তো এই হিসেব গুলো কিভাবে করতে হয় এবং এর মাধ্যমে কিভাবে ফ্রেম সাইজ বুঝে নিতে হয় চলুন দেখে নেই-
টপ টিউব
সাইকেলে বসা অবস্থায় দু'পায়ের মাঝে মাটির সাথে সমান্তরাল (কিংবা প্রায় সমান্তরাল) যেই টিউবটি থাকে এটিই টপ টিউব।
টপ টিউব এর দৈর্ঘ্য হিসাব করার জন্য একটি ফিতা কিংবা স্কেলের মাধ্যমে টপ টিউব যেখানে হেড টিউবের সাথে মিলেছে তার মধ্যবিন্দু থেকে টপ টিউব যেখানে সিট টিউবের সাথে মিলেছে তার মধ্যবিন্দু পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হিসেব করতে হবে।
সাধারণত রোড বাইকের টপ টিউব মাউন্টেন বাইকের চেয়ে বেশি লম্বা হয়ে থাকে। টপ টিউব যতো লম্বা হবে সাইকেলের দৈর্ঘ্য ততো বেশি হবে এবং রাইডারকে চালানোর সময় সামনে বেশি ঝোঁকে চালাতে হবে। অপরদিকে টপ টিউব যতো ছোট হবে সাইকেলের দৈর্ঘ্য ততো কম হবে এবং চালানোর সময় রাইডার সোজা হয়ে চালাতে বেশি আরামদায়ক হবে।
হেড টিউব
সাইকেলের একদম সামনে খাঁড়া যেই টিউবটি থাকে তাকে হেড টিউব বলা হয়।
হেড টিউবের দৈর্ঘ্য মাপা খুবই সহজ বিষয়, হেড টিউবের একদম উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সরাসরি যে দৈর্ঘ্য পাওয়া যায় সেটাই হেড টিউবের দৈর্ঘ্য।
হেড টিউব যতো লম্বা হবে সাইকেলের হ্যান্ডেলবারের উচ্চতা কিছুটা বেশি হবে এবং চালানোর সময় রাইডার সোজা হয়ে চালাতে বেশি আরামদায়ক হবে। অপরদিকে হেড টিউব যতো ছোট হবে সাইকেলের হ্যান্ডেলবারের উচ্চতা ততো কম হবে এবং রাইডারকে চালানোর সময় সামনে বেশি ঝোঁকে চালাতে হবে।
স্ট্যাক এন্ড রিচ
স্ট্যাক বলতে বুঝায় বটম ব্র্যাকেট থেকে হেড টিউব ও টপ টিউবের মিলন বিন্দুটি কতোটুকু উপরে। সাধারণত যে সাইকেলের ফ্রেম সাইজ বড় হয়ে থাকে তার স্ট্যাকও বেশি হয়ে থাকে।
অপরদিকে রিচ বলতে বুঝায় বটম ব্র্যাকেট থেকে হেড টিউব ও টপ টিউবের মিলন বিন্দুটি কতোটুকু সামনে। সাধারণত যে সাইকেলের ফ্রেম লম্বা হয়ে থাকে তার স্ট্যাকও বেশি হয়ে থাকে এবং ভাইস ভার্সা।
ছবিতে স্ট্যাক ও রিচ |
তাহলে বুঝা গেলো, অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে একটি সাইকেলের ফ্রেম নির্বাচন করতে হয়। তবে এর মানে এই না যে, নতুন সাইকেল কেনার সময় এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে ঘামাতে মাথার চুল পাকিয়ে ফেলবো। বরঞ্চ সাইজ চার্ট দেখে এবং সরাসরি সাইকেলে বসে যে সাইজ আপনার আরামসই মনে হয় সেটাই কিনুন।
0 Comments
কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত কিংবা প্রশ্ন করুন
(স্পাম কিংবা অশোভন কোন কমেন্ট করা নিষেধ, এবং সাথে সাথে ব্লক করা হবে)