করোনার কারণে দেশে দীর্ঘ দুই বছর ধরে থেমে থেমে চলছে লকডাউন। এই অবস্থায় অনেকেই বাসা থেকে খুব একটা বের হচ্ছেন না, তাই সাইকেল চালানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। কেউ বা আবার শহরের বাসায় বা মেসে সাইকেল রেখে দীর্ঘদিনের জন্য চলে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে।
এই লম্বা সময় সাইকেল বাসার কোণায় পড়ে থাকতে থাকতে অযত্নে অবহেলায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। কিন্তু কিছু সাধারণ ব্যাপারের দিকে খেয়াল রাখলেই সাধের সাইকেলটি-কে অব্যবহ্রত অবস্থাতে-ও ভালো রাখা যায়।
১। নিরাপদ স্থানে সাইকেল পার্ক করে রাখা
যেহেতু সাইকেলটি অনেকদিন এক স্থানে পড়ে থাকবে, আমাদেরকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে সাইকেল রাখার স্থানটি যথেষ্ট নিরাপদ। চোরের হাত থেকে তো নিরাপদ রাখতে হবেই, একই সাথে বাচ্চাদের হাতের নাগালে যাতে সাইকেল না থাকে সে ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে।
যেহেতু বাই-সাইকেল একটি ছোট বাহন, খুব একটা জায়গা দখল করে না, এবং খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করা যায়, সেহেতু রুমের মধ্যে সাইকেল রাখতে পারলে সব থেকে সেইফ বলে ধরে নেয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনার রুম যদি দশ তলা তে-ও হয়, তবুও উচিৎ দশ তলায় সাইকেল তুলে রুমের মধ্যে রাখা।
২। নির্দিষ্ট ধরণের সাইকেল-স্ট্যান্ড ব্যবহার করা
সাধারণত বাই-সাইকেলে "সাইড স্ট্যান্ড" দেয়া থাকে, যা আমরা সচরাচর ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু দীর্ঘদিন এভাবে সাইড স্ট্যান্ডের ওপর ভর করে সাইকেল দাড়িয়ে থাকলে সাইকেলের চাকার ওপর এক্সট্রা প্রেসার পড়ে। যার ফলে টিউব ও টায়ার এর ক্ষতি হতে পারে।
এই সমস্যা সমাধান করার জন্য একটা উপায় হতে পারে এমন স্ট্যান্ড ব্যবহার করা যা চাকা নয়, বরং ফ্রেমের ওপর ভর করে সাইকেল দাঁড় করিয়ে রাখে। এরকম একটা স্ট্যান্ড এর ছবি নিচে দেয়া হলো। আপনি চাইলে নিজে নিজেই এরকম স্ট্যান্ড তৈরি করে নিতে পারেন।
৩। চাকায় বাতাস ঠিক রাখা
টানা অনেকদিন সাইকেল এক স্থানে পড়ে থাকলে আস্তে আস্তে চাকার বাতাস কমতে থাকে। এক সময় বাতাস এতোটাই কমে যায় যে মনে হতে পারে চাকা লিক হয়ে গেছে। এই অবস্থায় বেশিদিন থাকলে সাইকেলের টায়ার এর টেম্পার নষ্ট হয়ে গিয়ে ফেটে যেতে পারে। তাই কমপক্ষে মাসে একবার টায়ারের বাতাস চেক করুন, এবং বেশি কমে গেলে আবার পাম্প দিয়ে রাখুন।
৪। চেইন লুজ করে রাখা
সাধারণত আমরা সামনের গিয়ার ২-৩, ও পেছনে ৪-৭/৮ গিয়ারে রেখে সাইকেল চালাই। নিয়মিত চালানোর সময় আপনি রাতে যে-কোন ভাবেই এই গিয়ার কম্বিনেশনে রেখে সাইকেল বাসায় রাখতে পারেন, তবে যদি টানা অনেকদিন সাইকেল ফেলে রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে গিয়ার গুলো এমন পজিশনে রাখতে হবে যাতে চেইন সর্বোচ্চ লুজ থাকে এবং শিফটারের ওপর প্রেসার মিনিমাম থাকে।
এর জন্য যা করতে হবে তা হচ্ছে, সামনের গিয়ার ১-এ নিয়ে আসুন (সব থেকে ছোট রিং-এ), আর পেছনের গিয়ার সর্বোচ্চ করে রাখুন (সব থেকে ছোট রিং-এ)। তাতে চেইন ও গিয়ার শিফটারের ওপর প্রেশার সব থেকে কম থাকবে, এবং সেগুলো ভালো অবস্থায় থাকবে।
বিঃ দ্রঃ সাইকেল চালানোর সময় কোন অবস্থাতেই এরকম গিয়ার কম্বিনেশনে সাইকেল চালাবেন না। তাতে ক্রসচেইনিং হয়ে সাইকেলের চেইন ছিঁড়ে যেতে পারে।
৫। ধুলাবালি থেকে রক্ষার জন্য সাইকেল ঢেকে রাখা
ধুলাবালি যে কোন যানবাহনের বড়ো শত্রু। বেশিদিন ধুলাবালি জমা হতে হতে সাইকেল অতিরিক্ত ময়লা হয়ে যায়, এবং পরবর্তিতে যন্ত্রাংশের স্বাভাবিক নড়াচড়া ব্যাহত হয়। তাই অবশ্যই সাইকেলের ওপর যাতে ধুলো না জমে সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে।
যদি একান্তই বাই-সাইকেল কাভার না পান, সেক্ষেত্রে পুরনো লুঙ্গি কিংবা বেডশিট ব্যবহার করেও কাভারের কাজ চালাতে পারেন।
৬। নিয়মিত লুবিং করা
সাইকেলের বিভিন্ন পার্টস-এ যাতে মরিচা না পরে, তার জন্য ফেলে রাখা অবস্থায়ও ২/৩ মাস পর পর একবার লুবিং করা উচিৎ। কিভাবে বাসায় বসেই নিজে নিজে সাইকেল লুবিং করতে হয় এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এই পোষ্টটি পড়তে পারেন- কিভাবে বাইসাইকেলের সঠিক যত্ন নিবেন।
হাতের কাছে যদি সাইকেল থাকে তবে উচিৎ হলো যতোটুকু সম্ভব হয় মাঝে মাঝে সাইকেল চালানো। তাতে সাইকেলেও মরিচা পড়েনা, একই সাথে নিজের স্বাস্থের-ও ভাটা পড়েনা। করোনা মহামারীর লকডাউনে সাইকেল চালানোর উপকারিতা অনেক, এ নিয়ে বিস্তারিত লেখা পড়ুন- করোনা মহামারির সময় সাইক্লিং এর গুরুত্ব।
তবে দীর্ঘ লকডাউনে সাইকেল যদি বাসায় রাখতেই হয় তাহলে উপরের নিয়মগুলো মেনে সাইকেলের যত্ন নিন, যাতে লকডাউন শেষে সাইকেলকে আগের অবস্থায় ফিরে পান।
লকডাউনে সাইকেল মেইনটেন্যান্স এর বিষয়ে বাংলা ভাষায় তৈরি ইউটিউব এর এই ভিডিও টি ফলো করতে পারেন-
0 Comments
কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত কিংবা প্রশ্ন করুন
(স্পাম কিংবা অশোভন কোন কমেন্ট করা নিষেধ, এবং সাথে সাথে ব্লক করা হবে)